সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ মঙ্গলবার ১৭ মে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের লড়াইয়ে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ব্যাটিং সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রদর্শনী করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শ্রীলঙ্কার বোলার-ফিল্ডারদের খাটিয়ে, হতাশায় ডুবিয়ে রানপাহাড়ে চড়ার মঞ্চ প্রস্তুত করে ফেলেছে টাইগাররা। স্বাগতিকরা মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই করে ফেলেছে ৩১৮ রান।
নিজ শহরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মাহমুদুল হাসান জয়। মাঝে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক ব্যর্থ হলেও, তামিম আহত হয়ে অবসর নেওয়ার পর বাকি সময় নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে পরিস্কারভাবেই চালকের আসনে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল ৩৯৭ রানে। জবাবে এরই মধ্যে ৩ উইকেটে ৩১৮ রান করে ফেলেছে বাংলাদেশ। সফরকারীদের সংগ্রহ ছাড়িয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রয়োজন আর ৭৯ রান।
চট্টগ্রাম টেস্টে তামিমের সেঞ্চুরি, মাহমুদুল, মুশফিকু ও লিটনের ফিফটিতে ২য় দিনটি সুন্দর কাটল টাইগারদের। এ দিন খেলা হয়েছে ৮৮ ওভার, ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যোগ করেছে ২৪২ রান। ৩ সেশনের দুটিতেই একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়েছে স্বাগতিকরা। সকালের সেশনে ২৮ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তামিম ও জয় যোগ করেন ৮১ রান।
তবে শেষ সেশনে আর কোনো উইকেট হারাতে দেননি লিটন ও মুশফিক। এই সময়ে ৩৫ ওভারে আসে ৯৮ রান। দুই ব্যাটসম্যানই অপরাজিত আছেন ফিফটি করে।
বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নামেননি তামিম। ১৩৩ রান করা বাঁহাতি ওপেনারের জায়গায় ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন দিন শেষে ১১৩ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত আছেন। ১৩৪ বলে ২ চারে ৫৩ রানে খেলছেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে এই দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৯৮।
বাংলাদেশ পিছিয়ে আর ৭৯ রানে, হাতে উইকেট ৭টি। তৃতীয় দিনেও উইকেট ছিল যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক। খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেননি শ্রীলঙ্কার বোলাররা। এর মধ্যে ক্যাচ ফেলার মাশুলও দিতে হয়েছে তাদের। বিশ্ব ফার্নান্দোর ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে সুযোগ পেয়ে এদিন ২ উইকেট নেন কাসুন রাজিথা।
লিটন দাস পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরপরই ফিফটি তুলে নিলেন মুশফিকুর রহিমও। ১২৪ বলে ২টি চারে মাইলফলক স্পর্শ করলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। মুশফিকের এটি ২৬তম টেস্ট ফিফটি, বাংলাদেশের হয়ে যা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৩১টি ফিফটি করে চূড়ায় আছেন তামিম ইকবাল। লিটন-মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে ১০৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৩০৯। আর ৮৮ রানে পিছিয়ে তারা।
বছরের শুরুতে ক্রাইস্টচার্চে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির পর আবার পঞ্চাশ ছুঁলেন তিনি। মাঝে চার ইনিংসে সর্বোচ্চ ছিল ৪১। মুশফিকুর রহিমের সিঙ্গেলে বাংলাদেশের দলীয় রান স্পর্শ করল তিনশ। ঠিক ১০১ ওভারে তিনশর ঠিকানায় পৌঁছাল স্বাগতিকরা।
শ্রীলঙ্কার চেয়ে মুমিনুল হকের দল পিছিয়ে আর ৯৭ রানে, হাতে উইকেট ৭টি। ১১৯ বলে ৪৬ রানে খেলছেন মুশফিক। লিটন ৯২ বলে ৪৭ রানে ব্যাট করছেন। বাঁহাতি স্পিনার লাসিথ এ¤॥^ুলদেনিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে পা বাড়িয়ে দেন মুশফিকুর রহিম। কোনো শট খেলার চেষ্টা তিনি করেননি। এলবিডব্লিউয়ের জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক নেন রিভিউ।
ক্যাচ দিয়ে জীবন পেলেন লিটন দাস। বোলিংয়ে ফিরে উইকেট পেতে পেতেও পেলেন না ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। অফ স্পিনারকে বেরিয়ে এসে ডিফেন্স করেছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বল ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় শর্ট লেগে। বেশ নিচু ক্যাচ ছিল অবশ্য, বলে হাত ছোঁয়ালেও মুঠোয় জমাতে পারেননি ওশাদা ফার্নান্দো।
অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মারলেন লিটন দাস। এই বাউন্ডারিতে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তার চতুর্থ জুটির রান স্পর্শ করল পঞ্চাশ, ১০৮ বলে।
দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার বোলারদের সুযোগই দিচ্ছেন না তারা।
৮৪ বলে একটি চারে ৩৫ রানে খেলছেন মুশফিক। ক্র্যাম্পের জন্য চা-বিরতির পর আর ব্যাটিংয়ে না নামা সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবালের জায়গায় নেমে লিটন ৬২ বলে ৫ চারে ৩২ রানে অপরাজিত আছেন।
এই ইনিংসটিকে ১৫২ রান পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মালিক হবেন তামিম। কিন্তু সেটি হওয়ার আগেই দ্বিতীয় সেশন শেষে হাতের পেশিতে টান লাগায় আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি। তখন তার নামের পাশে ছিল ২১৭ বলে ১৩৩ রান।
পরে দিনের শেষভাগ অনায়াসেই কাটিয়ে দিয়েছেন মুশফিক ও লিটন। তামিমের মতো মুশফিকের সামনেও রয়েছে পাঁচ হাজার রানের ক্লাবে ঢোকার সুযোগ। এজন্য তার প্রয়োজন ছিল ৬৮ রান। আজকের খেলা শেষ হওয়ার আগে মুশফিক করে ফেলেছেন ৫৩ রান। ফলে আর মাত্র ১৫ রান প্রয়োজন টাইগারদের সাবেক অধিনায়কের।
মুশফিকের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে ফিফটি তুলে নিয়েছেন লিটনও। একের পর এক দৃষ্টিনন্দন শটে দিন শেষ হওয়ার আগে ৮ চারের মারে ১১৩ বলে ৫৪ রান করেছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। অবিচ্ছিন্ন এ জুটিতে তাদের সংগ্রহ ৯৮ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৩৯৭/১০, ১৫৩ ওভার (অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ১৯৯, দিনেশ চান্ডিমাল ৬৬, কুশল মেন্ডিস ৫৪, ওশাদা ফার্নান্দো ৩৬, বিশ্ব ফার্নান্দো ১৭*; নাঈম হাসান ৬/১০৫, সাকিব আল হাসান ৩/৬০, তাইজুল ইসলাম ১/১০৭)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (ব্যাটিং): ৩১৮/৩, ১০৭ ওভার (তামিম ইকবাল ১৩৩*, মাহমুদুল হাসান জয় ৫৮, মুশফিক ৫৩*, লিটন ৫৪*; কাসুন রাজিথা ২/১৭, আশিথা ফার্নান্দো ১/৫৫)।